নিজামী-বাবরসহ ১৪ জনের ফাঁসি
চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া অস্ত্র আটক মামলার দুটি ধারায় এই ১৪ জনকে যাবজ্জীবন ও সাত বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। ঘটনার প্রায় পৌনে ১০ বছর পর চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।
অস্ত্র চোরাচালান মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া, সাবেক শিল্পসচিব নুরুল আমিন, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহীম, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, হাফিজুর রহমান, দীন মোহাম্মদ ও হাজি আবদুস সোবহান। এদের মধ্যে পরেশ বড়ুয়া ও নুরুল আমিন পলাতক। হাজি আবদুস সোবহান জামিন ছিলেন। তবে আজ আদালতে হাজির ছিলেন। অস্ত্র চোরাচালান মামলায় ৩৮ জন খালাস পেয়েছেন। আসামি ছিলেন ৫২ জন।
অস্ত্র আইনের মামলায় একই ১৪ আসামিকে ১৯ (এ) ধারায় যাবজ্জীবন এবং ১৯ (সি) ধারায় ৭ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় খালাস পেয়েছেন ৩৬ জন। আসামি ছিলেন ৫০ জন।
আজ দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে আদালতের এজলাসে ওঠেন চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমান।এরপর রায় পড়া শুরু করেন তিনি।সকাল সোয়া ১০টার দিকে বিচারক আদালতে আসেন।
এর আগে বেলা সোয়া ১১টায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রিজনভ্যানে করে মামলায় কারাগারে আটক থাকা ১১ আসামিকে আদালতে নেওয়া হয়। রায় ঘোষণা উপলক্ষে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নিজামী ও বাবরকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল নগরের চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার (সিইউএফএল) জেটিঘাটে খালাসের সময় দেশের ইতিহাসে অস্ত্রের সবচেয়ে বড় চালান আটক হয়।
অস্ত্র আটকের ঘটনায় ২০০৪ সালের ৩ এপ্রিল কর্ণফুলী থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(বি) ধারায় একটি এবং ১৮৭৮ সালের ১৯(এ) ধারায় অস্ত্র আইনে অপর একটি মামলা করা হয়। দুটি মামলারই বাদী কর্ণফুলী থানার তত্কালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাদুর রহমান। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কামাল উদ্দিন আহাম্মদ গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে জানান, দুই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৫৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। এ ছাড়া সাক্ষী ও আসামিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও রয়েছে। সাক্ষ্যে উঠে এসেছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে উলফার জন্য বাংলাদেশের জলসীমা ব্যবহার করে অস্ত্রগুলো নিয়ে এসেছে।
ঘোষণার পর আজ পিপি কামাল উদ্দিন আহাম্মদ সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে যথাযথ সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়ায় সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছেন আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক ও চোরাচালান মামলায় ২০০৪ সালের ১১ জুন ৪৪ জনের বিরুদ্ধে প্রথম দফা অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবার তদন্ত হয়। ওই বছরের ২৫ আগস্ট স্থানীয় চোরাচালানি হাফিজুর রহমান, দীন মোহাম্মদসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। অভিযোগপত্রভুক্ত বাকি আসামিদের বেশির ভাগ ছিলেন শ্রমিক, মাঝিমাল্লা। মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম শুরু হয় এবং দুই মামলায় ৩১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সাতটি ত্রুটি চিহ্নিত করে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ২৬ জুন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান চৌধুরী দুই মামলায় নিজামী, বাবরসহ নতুন ১১ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। এতে অস্ত্র আটক মামলায় ৫০ জন এবং চোরাচালানের মামলায় ৫২ জনকে আসামি করা হয়। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর নতুন ১১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় এবং ২৯ নভেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। অস্ত্র আটক মামলায় ৫৬ এবং চোরাচালান মামলায় ৫৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আজ (৩০ জানুয়ারি) রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত।
বাদীকে আবার জেরার অনুমতি ও আদালত পরিবর্তনের জন্য হাইকোর্টে তিন আসামির করা চারটি আবেদন ২৭ জানুয়ারি খারিজ হয় .