আফ্রিদির ডাবল ছক্কা
হাইভোল্টেজ ম্যাচ কাকে বলে? চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচটি না দেখে থাকলে অনেক কিছুই হয়তো মিস করেছেন। শেষদিকে ক্ষণে ক্ষণেই ম্যাচের দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়। শেষ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১০ রানের। উইকেটে ছিলেন শহীদ আফ্রিদি ও সাঈদ আজমল। ইনিংসের শেষ ওভার করতে বল হাতে নেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। প্রথম বলেই সাঈদ আজমলের উইকেটটি তুলে নিয়ে ভারতের জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন অশ্বিন। কিন্তু অশ্বিনের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে টানা দুটি দর্শনীয় ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন শহীদ আফ্রিদি। পাকিস্তান জয় পায় এক উইকেটে। ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ৩৪ রানে অপরাজিত ছিলেন আফ্রিদি।
ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানকে ৭১ রানের দারুণ সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার শারজিল খান ও আহমেদ শেহজাদ। পাকিস্তানের এই উদ্বোধনী জুটিতে ফাটল ধরান ভারতীয় স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তার বলে সরাসরি বোল্ড হন শারজিল (২৫)। এরপর দলীয় রান তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছানোর আগে আরো দুটি উইকেটের পতন হয় পাকিস্তানের। মিসবাহ-উল হক ও ওপেনার শেহজাদ সাজঘরে ফিরে যান। অমিত মিশ্রের বলে শেহজাদ ক্যাচ উঠিয়ে দেন। আউট হওয়ার আগে ৬টি চারের সাহায্যে ৪২ রান করেন শেহজাদ। শেহজাদ আউট হওয়ার পরের ওভারে দলের কাণ্ডারি মিসবাহ-উল হকও অপ্রত্যাশিত রানআউটের ফাঁদে পড়েন। দলীয় ১১৩ রানের মাথায় পাকিস্তানের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান উমর আকমলও আউট হয়ে যান। ৪ উইকেট হারিয়ে চাপেই পড়ে যায় পাকিস্তান। এ অবস্থায় মোহাম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মাকসুদ ৮৭ রানের চমত্কার জুটি গড়েন। ভারতের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এই জুটিতে শেষ পর্যন্ত ফাটল ধরাতে সক্ষম হন স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনই। তার বলে হাফিজ ক্যাচ দেন ভুবনেশ্বরের হাতে। তবে সাজঘরে ফিরে যাওয়ার আগে ৭৫ রানের অনবদ্য এক ইনিংস উপহার দেন হাফিজ। মূলত তার এই ইনিংসেই পাকিস্তানের জয়ের ভিত মজবুত হয়।
টস জিতে ভারতকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় পাকিস্তান। ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শুরুটা ভালো করতে পারেনি ভারতীয় দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শেখর ধাওয়ান। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই ভারতের ওপেনিং জুটি ভেঙে দেন স্পিনার মোহাম্মদ হাফিজ। এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন ধাওয়ান। দুটি চারের সাহায্যে মাত্র ১০ রান আসে তার ব্যাট থেকে। এরপর ফর্মে থাকা বিরাট কোহলির উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানকে আরেকটি ব্রেকথ্রো এনে দেন উমর গুল। ওপেনার রোহিত শর্মা ও আজিঙ্কিয়া রাহানে চেষ্টা করলেও এই জুটি বেশিক্ষণ সময় থাকতে পারেনি। পাকিস্তানের নবীন বোলার মোহাম্মদ তালহার বলে রোহিত শর্মা ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। তার ব্যাট থেকে আসে ৫৬ রান। এর মধ্যে ৭টি চার ও দুটি ছক্কার মার রয়েছে। তখন ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৯২ রান। দলীয় রান তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছানোর পর রাহানেও উইকেট হারান। ফাস্ট মিডিয়াম পেসার তালহার বলে রাহানেও ক্যাচ উঠিয়ে দেন হাফিজের হাতে। আউট হওয়ার আগে ৩টি চারে ২৩ রান করেন রাহানে। ১০৩ রানে যখন চার উইকেট নেই ভারতের, তখন আম্বাতি রায়ুদু ও দীনেশ কার্তিক ব্যাট হাতে শক্ত জুটি গড়ার ইঙ্গিত দেন। ভালোই ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছিলেন এই দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু ৫২ রানের জুটি গড়ার পর প্যাভিলিয়নমুখী হন কার্তিকও। হাফিজের বলে সাঈদ আজমলের হাতে তালুবন্দি হন কার্তিক (২৩)। তবে সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে অনেকটা টি-টোয়েন্টি স্টাইলে ব্যাট করেন রবীন্দ্র জাদেজা। রায়ুদু-জাদেজা ভারতের স্কোর টেনে দুইশ’ পার করেন। ৫৮ রান করে সাঈদ আজমলের বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন রায়ুদু। তখন ভারতের সংগ্রহ ২১৪ রান। পরে জাদেজার অপরাজিত হাফসেঞ্চুরিতে ২৪৫ রান করে ভারত। ৪টি চার ও দুটি ছক্কার সাহায্যে ৫২* রানের ইনিংস খেলেন জাদেজা। পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ তিন উইকেট পান স্পিনার সাঈদ আজমল। মোহাম্মদ হাফিজ ও মোহাম্মদ তালহা প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট নেন।