Published On: Mon, Mar 3rd, 2014

আফ্রিদির জোড়া ছক্কায় পাকিস্তানের জয়

Share This
Tags

ভারত : ২৪৫/৮, পাকিস্তান : ২৪৯/৯ ফল : পাকিস্তান ১ উইকেটে জয়ী
আফ্রিদির জোড়া ছক্কায় পাকিস্তানের জয়
07_46456
লাহোরের গাদ্দাফী না ভারতের ইডেন গার্ডেনে হচ্ছিল খেলা! মিরপুর শেরেবাংলায় যারা কাল নিরপেক্ষভাবে খেলাটা উপভোগ করছিলেন, তাদের মনে ওই প্রশ্নই চলে আসছিল বারবার। আসলে ক্রিকেটের দেশ ভারত, পাকিস্তান বলে কথা নয়, ক্রিকেটকে ভালোবেসে সাপোর্ট করতে পারেন যেকোনো দলকেই। কাল সেসব সাপোর্টারের জয়জয়কার। চমৎকার এক পাকিস্তান-ভারত ম্যাচ উপভোগ করেছেন তারা। যখন ভারত ভালো করেছে তখন উৎসাহ জোগাতে ভোলেননি যেমন ভারত ইডেন গার্ডেনে বসে অনুভব করত। ঠিক পাকিস্তানের বেলায় লাহোরের আমেজ। উত্তেজনাপূর্ণ এ ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছে পাকিস্তান এক উইকেটে। ম্যাচে কখনো মনে হচ্ছে এ বুঝি জিতে যাবে ভারত। আবার পাকিস্তান। ক্রিকেটের অনিশ্চয়তায় ভরা এ ম্যাচে জিতে এগিয়ে গেল তারা এশিয়া কাপে। উত্তেজনাপূর্ণ এ ম্যাচটি নিষ্পতি হয় শেষ ওভারে। ওই ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১০ রান। আর ভারতের দরকার ২ উইকেট। কিন্তু আশ্বিনের করা ওই ওভারের প্রথম বলে আজমল বোল্ড হলে ম্যাচ জমে যায় আরো। কী হবে কিছুই যেন অনুমান করা যাচ্ছিল না। শেষ পাঁচ বলে ১০ রান আর ভারতের শেষ উইকেট। ক্রিজে এসে জুনায়েদ এক রান নিয়ে আফ্রিদিকে স্ট্রাইক দিলে প্রাণ ফিরে পায় যেন পাকিস্তান।
ব্যাট হাতে দীর্ঘ দিন অনুজ্জ্বল আফ্রিদি প্রথম বলেই এক্সট্রা কাভার ও লং অফের মাঝামাঝি দিয়ে গ্যালারির কাছে নিয়ে ফেলেন। উত্তেজনার মাত্রা যেন বেড়ে যায় আরো। এরপর শেষ তিন বলে দরকার তিন রান। আশ্বিনের পরের বলটি আবারো লং অনের ওপর দিয়ে বাতাসে ভাসিয়েই দুই হাত তুলে জয়ের আনন্দে দাঁড়িয়ে যান আফ্রিদি। তখনো সবাই দেখছিলেন ছক্কাটা হচ্ছিল কি না। শেষ পর্যন্ত হলোও। পাকিস্তান জিতে গেল ম্যাচ দুই বল হাতে রেখেই দম বন্ধ হওয়া এ ম্যাচে। আর সেটা এলো সেই আফ্রিদির হাত ধরেই।
প্রথম ব্যাটিং করে ভারতের করা ২৪৫ রান পাকিস্তানের জন্য তেমন বড় কোনো সমস্যা হবে না বলে যারা ধারণা করে রেখেছিলেন। তাদেরই বেশি টেনশনে ভুগতে হয়েছে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের টালমাটাল অবস্থার কারণে। দুই ওপেনার শারজিল খান ও আহমেদ শেহজাদ ৭১ রানের এক পার্টনারশিপ খেলার পর ম্যাচটা পাকিস্তানের অনুকূলে গিয়েছিল বলেই মনে হয়। কিন্তু ওই রানে শারজিল, ৯৩ রানে শেহজাদ ও ৯৬ রানে মূল ব্যাটসম্যান মিসবাহউল হক রান আউট হয়ে যাওয়ার পর ম্যাচের রঙ বদলাতে শুরু করে। টালমাটাল ব্যাটিং করে আফগানদের বিপক্ষে পরাস্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচানো উমর আকমলও আউট হয়ে যান খুব দ্রুত। দলের রান তখন মাত্র ১১৩/৪। ম্যাচ যে হাতছাড়া হচ্ছে তাতে আর কোনো সন্দেহ দেখছিল না পাকিস্তানের সাপোর্টাররা। কিন্তু ওয়ান ডাউনে নামা মোহাম্মাদ হাফিজ ও ৬ নম্বরে খেলতে নামা শোয়েব মাকসুদ মিলে ভারতীয়দের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ব্যাটিং করে যান। তারাই ম্যাচটাকে জয়ের পর্যায়ে নিয়ে যান। পঞ্চম উইকেট জুটিতে তারা সংগ্রহ করেন মূল্যবান ৮৭ রান, ২১.১ ওভারে। দলের রান তখন ২০০। ৭৫ করে আশ্বিনের বলে আউট হন হাফিজ। কিছুক্ষণ পরই আফ্রিদির সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন মাকসুদ। এরপর গুল কিছুক্ষণ মেরে খেলে দলীয় ২৩৫ রানে আউট হলে আবারো টেনশন শুরু হয়। এরপর ২৩৬ রানে তো তালহা ও আজমল আউট হলেন। পরে ২৪৬ রানের টার্গেটে ওই আফ্রিদিই শেষ টানেন। ১৮ বলে তিনটি ছক্কা ও দুইটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে অপরাজিত থাকলেন আফ্রিদি ৩৮ রানে।
ব্যাটিং এর আগে সুনাম অনুসারে করতে পারেনি ভারত। পাকিস্তানের তুলনায় ভারতীয় ব্যাটিং গুছানো হলেও মিরপুরের উইকেটে ২৪৫ দুর্বল রানই বটে। এ ক্ষেত্রে যতটা না পাকিস্তানের বোলারদের কৃতিত্ব, তার চেয়ে ঢের বেশি ব্যর্থতাই ছিল ভারতের ব্যাটিং লাইনে। শেখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি ও রাহনের দ্রুত আউট হওয়াটাই বড় স্কোর গড়ার অন্তরায় হয়ে যায়। তবে ধোনির অনুপস্থিতি ছাড়াও এশিয়া কাপের সর্বশেষ আসরে এ পাকিস্তানকে হারিয়েছিল কোহলির ব্যাটিংয়ে। সে কোহলিকে ৫ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান ওমর গুল। দলীয় রান তখন ৫৬। পরে রুহিত শর্মা, রাহনে আউট হলে টেনশনেই পড়ে ভারতীয়রা। কিন্তু দলের এ মুহূর্তে দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করেন আমবাতি রাইডু। প্রথম দিনেশ কার্তিকের সাথে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৫২ রানের মূল্যবান জুটি খেলে একটা অবস্থানে নেন দলীয় স্কোরটা। ১২.৫ ওভারে ওই পার্টনারশিপ হওয়ার পর হাফিজ জুটি বিচ্ছিন্ন করেন। এরপর আরো একটা দায়িত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ গড়েন রাইডু জাদেজার সাথে। সেটা ষষ্ঠ উইকেটে। ১০.১ ওভারে ওই পার্টনারশিপ হয় সর্বোচ্চ ৫৯ রানের। দলীয় ২১৪ রানে বিচ্ছিন্ন হয় এ জুটি। যখন আউট হয়ে যান রাইডু ইনিংস সেরা ৫৮ রান করে। জাদেজা শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ব্যাটিং করে গেলেও খুব যে অ্যাটাকিং ছিলেন তা নয়। ৪৯ বলে দু’টি ছক্কা ও চারটি বাউন্ডারির সাহয্যে ৫২ রান করেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত দলের রান দাঁড়ায় ওই পর্যায়ে। এ দুই ব্যাটসম্যান ছাড়া আরেকটি হাফ সেঞ্চুরি হয়। সেটা ওপেনার রুহিত শর্মার। ৫৮ বলে ৫৬ রান করেছিলেন তিনি দুটি ছক্কা ও সাতটি বাউন্ডারির সাহায্যে। বল হাতে এ ম্যাচে অভিষেক হওয়া মোহাম্মাদ তালহা এক স্পেলে সাত ওভার বোলিং করে ২২ রানে নেন দুই উইকেট। এ ছাড়া সাঈদ আজমল তিনটি ও মোহাম্মাদ হাফিজ নেন দুই উইকেট।
আফ্রিদিকে আউট করার পরিকল্পনা কাজে দেয়নি : কোহলি
ভারত পাকিস্তান খেলায় কখনই নিশ্চিত বলা যায় না কে জিতবে। গতকালও এমনটা হয়েছে। শেষ বলটি পর্যন্ত অপো করতে হয়েছে। উত্তেজনাকর খেলায় শেষ পর্যন্ত দুই বল বাকি থাকতেই ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের জয় সত্যিই এক অভাবনীয় সাফল্য। তবে ভারতের ব্যর্থতাও কম নয়। গত কয়েকটি ম্যাচ তারা হেরে মানসিকভাবে বেছে নিয়েছে এশিয়া কাপের শিরোপা। বাংলাদেশের সাথে জিতে, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের সাথে হেরে ছিটকে গেছে রেস থেকে। গতকাল খেলা-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এলেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। পরাজয়ের কারণে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান কিংবা অন্য কোনো দলের বিপে ২৪৫ রান খারাপ নয়। সম্মানজনক স্কোর। তারপরও আমরা পারিনি। এটা আমাদেরই ব্যর্থতা। পর পর তিন চারটি ভুল করলে নিজেদের তথা দেশের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। খেলা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আজ একটি কথাই বলব। ভুল থেকেই তো মানুষ শিা নেয়। আর আমরাও এখান থেকেই শিখব এবং ভবিষ্যতে ভালো করব।’
আফ্রিদিকে আউট করার জন্য একটা বিশেষ পরিকল্পনা ছিল। তাকে সহজ বল দিয়ে টোপ ফেলেছি। সে তিন চারটি মেরেছেও। কিন্তু টাইমিং ঠিক হওয়ায় আমাদের বিপে গেছে। ফলে সেই দলকে জয় এনে দিয়েছে। তারা মাঝখানে চার ছয়ের দিকে না ঝুকে সিঙ্গেলের দিকেই জোর দিয়েছে। সেখানেও আমরা পিছিয়ে গেছি। শেষ দিকে আমরা পারিনি এটাই সত্যি।’ ক্যাপটেন্সি নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘দলে টিকে থাকতে হলে তো কম্পিটিশন করেই টিকে থাকতে হবে।’
রান চেজ করার বদনাম ঘুচেছে : মিসবাহ
বেজায় খুশি পাকিস্তানের কোচ মিসবাহ উল হক। সাথে সাথে তার পুরো দলসহ দেশবাসী। গত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তান প্রতিপরে রান চেজ করে জিততে পারে না বলে বদনাম হয়ে গেছে। ভারতের ২৪৫ রানের জবাবে ২৪৯ রান করে জিতেছে বিধায় খুশি মনেই মিসবাহ বলেন, ‘আজ আমাদের সে বদনাম ঘুচেছে। আমরাও পারি। এ কথাটা এখন বলতে পারব। প্রেসার থেকে আফ্রিদি যেভাবে মুক্ত করেছে তা সত্যিই কল্পনাতীত হলেও অসম্ভব ছিল না। সে ওটা করে দেখিয়েছে। মাঝামাঝিতে শোয়েব মাকসুদ ও হাফিজ জুটিতে আমরা এগিয়ে গেছি। শেষ দিকে তাড়াতাড়ি জয়ের নেশায় ভুল হয়েছে। একবার তো ভেবেছি ম্যাচটি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। পরে আফ্রিদি ও উমর গুল ম্যাচটি ধরে রেখেছে। বিগ ম্যাচে আসলে মনের ওপর কন্ট্রোল থাকে না। জিততে হলে উইকেট ও বল থাকা জরুরি। আমাদের শেষ মুহূর্তে কিছুই ছিল না। তাই বারবার টেনশন হচ্ছিল। আফ্রিদিকেও পাকিস্তানে অনেক দোষী করা হয়েছে। আজ তা থেকেও মুক্তি পেল সে।’
পরের ম্যাচ বাংলাদেশের বিপক্ষে। পরিকল্পনায় মিসবাহ বলেন, ‘দুটি ম্যাচ সাকিব খেলতে পারেনি। আমাদের বিপে তাকে পাচ্ছি। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জোর আরো বেড়ে গেল। স্ট্রং প্রতিপরে বিপে আমরা সেরাটাই খেলব। কারণ ফাইনালে যেতে তা প্রয়োজন।’

About the Author

-

Leave a comment

XHTML: You can use these html tags: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <strike> <strong>